আমি মন্ত্রী-এমপি বানাই : সিতারা বেগম

প্রকাশিত: ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৬

আমি মন্ত্রী-এমপি বানাই : সিতারা বেগম

প্রথম বাংলা : সেতারা বেগম। গ্রামের বাড়ি বরগুনায়। গত দুই যুগেরও বেশি সময় আগে পায়রা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় তার বাড়ি-ঘর। বেঁচে থাকার তাগিদে আশ্রয় নেন রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে দীর্ঘ এ সময়ে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ হয়েছেন তিনি। কখনও বা উচ্ছেদের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এখনও আসে এমন খবর। উচ্ছেদ আতঙ্ক নিয়েই নিত্যদিন পার করতে হয় তার মতো আরও অনেককে। বললেন, ‘আমি বস্তিবাসী তো কী অইছে? কড়াইল বস্তিতে ২৫ বছর ধইরেই আছি। পায়রা নদী সব ভাইঙ্গা ফেলনের পর এইখানে আইছি। বঙ্গবন্ধুর দ্যাশে গণতন্ত্র আছে। আমি তো ভুট দেই। এমপি-মন্ত্রী আমিই বানাই। তাইলে কিছুদিন পরপরই আমাগো কেন উচ্ছেদের ঘুষণা দেয়? রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি পত্রিকার সম্মেলন কক্ষে কর্মশালায় অংশ নিয়ে এভাবেই বলছিলেন সেতারা বেগম। তিনি বলেন, আগেও অনেকবার উচ্ছেদ কইরা দেছে। কতো কষ্ট করছি। পলিথিন দিয়ে ঘর বানাইয়া দিনের পর দিন থাকছি। একটা কাপড় দিয়াই বছর কাটাইয়া দিছি।‘তবে এহন আমি ভালো আছি। এনজিও সাহায্য দিয়া কাপড়ের ব্যবসা, চা বিক্রি করছি। দুই পোলা মেট্রিক পাস করছে। এহন আমার চার-পাঁচটা কাপড় সব সুমই থাহে।’ সেতারা বলতে থাকেন, ‘আমরা বস্তিবাসী বলে হেলা করবেন না। কড়াইল বস্তিতে তিন লাখ মানুষ থাকে। ভুটার (ভোটার) আছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার। গণতান্ত্রিক দ্যাশে আমাগোর অধিকার আছে। অনেক দাবি দাওয়ার পর সরকার আমাগো বিদ্যুৎ দিছে। ওয়াসা পাম্প বসাইছে। আমরা সময় মতো কারেন (বিদ্যুৎ), পানির বিল দেই।’ ‘আমাগোরে উত্তরা, ঝিলমিল প্রকল্পে ফ্ল্যাট দেন। কিস্তির ট্যাকা ঠিকমতই দিমু। নইলে আর আমাগো উচ্ছেদ করবেন না,’ যোগ করেন তিনি। আকুতি জানিয়ে একই বস্তির বাসিন্দা আনার কলি বলেন, ‘আম‍াগোর সোয়ামীরা (স্বামী) বাইরে যায়। আর ফিরা আসে না। পরে আমাগো কাছে আসে তালাকনামা।’  ‘তখন দুই-তিনডে বাচ্চা নিয়া আমরা কই যাই, কি করি? আপনেরা এ বিষয়ডা একটু খেয়াল করবেন।’ বেসরকারি সংস্থা দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) ‘সিঁড়ি’ প্রকল্পের লেসন লার্নিং ও সমাপনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করে। প্রকল্পটি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শহুরে দারিদ্র্য ও হতদরিদ্রদের উন্নয়নে কাজ করছে। এ সময়ে কড়াইল, কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর, বৌবাজার, মিরপুর, কল্যাণপুর বস্তিতে বসবাসরত ৩০ হাজার হতদরিদ্র পরিবারের সামগ্রিক জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করছে ডিএসকে। সংস্থাটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন- অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন, পল্লী কর্ম সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার, সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।